কিভাবে সিভি তৈরি করব

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই নানা প্রয়োজনে আমাদের সিভি তৈরি করতে হয়। বর্তমানে ভাল মানের সিভি তৈরিও অন্যতম দক্ষতার মধ্যে পড়ে। নিজের পরিচয়, অর্জন কিভাবে সংক্ষেপে তুলে ধরব এটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে অনেকেই। সিভিতে কি রাখবে কি রাখবে না ভাবতে থাকে।
সিভি কি?
Curriculum Vitaeকে সংক্ষেপে সিভি বলা হয়। সিভি হচ্ছে সর্বোচ্চ কয়েক পাতার একটি সংক্ষিপ্ জীবন বৃত্তান্ত। এটাতে একজন ব্যক্তর নাম, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। বর্তমানে চাকরির ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে একাডেমিক ও সাংবাদিকতার জন্যে সিভি এমনকি রাজনৈতিক সিভি লেখা হচ্ছে। সিভি লিখার উপর ফ্রিল্যান্সিংও করা যাচ্ছে। সাধারণত সিভি লেখা হয় ইংরেজীতে। বর্তমানে বাংলায় সিভি লেখার প্রচলন শুরু হয়েছে।
Resume কি?
বলতে গেলে সিভি ও রিজুউম একই। এদের মধ্যে শুধু গঠনগত দিক থেকে ভিন্নতা আছে। সিভি সাধারণতা ২ থেকে তিন পাতার হয় আর রিজুউম সবসময় এক পাতার হয়। সিভিতে অনেক বিষয়ের বর্ণনা থাকলেও রিজুউমে সংক্ষিপ্ত আকারে তথ্য দেওয়া হয়।

সিভি (CV) ও Resume এর মধ্যে পার্থক্য কি?
সিভিতে কি কি বিষয় উল্লেখ করবেন
নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা
প্রথম অংশে নিজের পুরো নাম লিখতে হবে। সার্টিফিকেটে যে নামে আছে সেটাই দিতে হবে। ডাকনাম বা ছদ্মনাম ব্যবহার করা যাবে না। নামের আগে মিস্টার বা মিসেস ব্যবহার করে অনেকে। এই ভুল করা যাবে না।
ঠিকানা সবসময় স্পষ্ট হতে হবে। মোবাইল নাম্বার যুক্ত করতে হবে। একটির বেশি নাম্বার ব্যবহার করা যাবে না। মেইল এড্রেস অবশ্যই সংক্ষেপে সুন্দর হতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে লিংকডিনের প্রোফাইল এড করতে পারেন কিন্তু ফেসবুক একাউন্ট যুক্ত না করাই ভাল। এছাড়ও ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ছঅঅঢ়াও পোর্টফোলিও প্রকাাশিত হয়েছে এমন ওয়েবসাইট যুক্ত করা যেতে পারে।
- নিজের নার (সার্টিফিকেট অনুসারে)।
- মোবাইল নাম্বার অথবা ফোন নাম্বার (যেকোন একটি)।
- ইমেইল এড্রেস (harun@gmail.com Not smartharun@gmail.com)।
- পূর্ণ ঠিকানা (পোস্ট অফিস এর ঠিকানা গুরুত্বপূর্ণ)।
- ফেসবুক প্রোফাইল (As you want)।
ছবি
সাম্প্রতিক সময়ে তোলা ছবি সিভিতে যুক্ত করতে হবে। ছবির পেছনের অংশ এক রঙের হতে হবে। পরিপাটি হয়ে ছবি তুলতে হবে। ছবিতে চেহারা বোঝা যায় না এরকম ছবি ব্যবহার করা যাবে না। সিভির ছবি স্পষ্ট হতে হবে।
পেশাগত লক্ষ্য
পেশাগত কি লক্ষ্য সিভিসে সেটা উল্লেখ করতে হবে। সিভির ভাষা হবে সংক্ষিপ্ত ও গোছালো। ইংরেজী সিভির ক্ষেত্রে ব্যাকরণগত ভুলের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তথ্য যেন যে পদে আবেদন করা হয়েছে তার সাথে সঙ্গত হয়। অপ্রাসঙ্গকি বাক্যজুড়ে দিলে বিরক্তির উদ্রেক হবে।
- প্রতিষ্ঠানের নাম।
- চাকরিকালীন পদবী।
- কত সাল থেকে কত সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
- Job Responsibility.
- Special Achievement.
শিক্ষা
সর্বশেষ যে ডিগ্রীটি অর্জন করেছেন সেটি প্রথমে লিখতে হবে। কোন বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন কিংবা কোন অনুষদে পড়েছেন, কত সালে পাস করেছেন বা কত রেজাল্ট ছিল এসব উল্লেখ করা যেতে পারে। পড়ালেখা শেষ না হলে পরীক্ষার্থী শব্দটি লিখবেন। ক্রমানসুরে কলেজ ও স্কুলের তথ্য লিখতে হবে।
- প্রশিক্ষণের বিষয়ে যেকোন অভিজ্ঞতা।
- যেকোন গ্রাজুয়েশন (এসএসসি, এইচএসসি, বিবিএ, এমবিএ)
- কোর্সের সময়কাল (কত থেকে কত)
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ও শিক্ষা বোর্ড
- পরীক্ষার সন ও রিজাল্ট পাবলিশ হওয়ার সন
- একাডেমিক বিষয়ে অন্য কোন শিক্ষা সনদ
একাডেমিক প্রকাশনা বা প্রকল্প
স্নাতক পড়াকালীন প্রকাশিত কোন গবেষণা বা রিপোর্ট থাকলে তা জুড়ে দিতে পারেন। যারা প্রকৌশলের শিক্ষার্থী নিজেদের কোন প্রকল্পের নাম যুক্ত করবেন। যারা ব্যবসায় অনুষদের ছাত্র তারা ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করলে সেটি যুক্ত করতে পারেন। কোন অর্গানাইজেশনে কিবা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে থাকলে তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরুন।
পেশাগত অভিজ্ঞতা
আমাদের দেশে সাধারণতা সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীদের কোন পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকে না। তারপরও কেউ যদি কোথাও কাজ করেন থাকেন (মেলায় বিক্রয়কর্মী) তাহলে তা লিখুন। পদ কি ছিল, কতদিন কাজ করেছেন তা উল্লেখ করবেন। কোন সম্মেলন বা অনুষ্ঠানের আয়োজক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে যুক্ত করুন।
স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ
কোন অর্গানাইজেশনে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করলে সেটি যুক্ত করুন। কাজের মেয়াদ ও পদ উল্লেখ করুন। প্রতিটি কাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে পারেন।
কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ
পড়ালেখাকালীন যেসব কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন সেটির তালিকা যুক্ত করুন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষনের সাথে চাকরির পদের সামঞ্জ্যস্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনলাইনে কোন ডিগ্রী নেওয়া থাকলে সেটিও যুক্ত করুন।
ভাষা দক্ষতা
বাংলাদেশে চাকরির বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে ইংরেজী ও বাংলা আবশ্যিক হিসেবে থাকে। এছাড়াও যদ আইইএলটিএস বা টোয়েফলে অংশ নিলে স্কোর লিখা যেতে পারে। অন্য কোন ভাষায় দক্ষতা থাকলে সেটিও উল্লেখ করুন।
কম্পিউটার-দক্ষতা
যে পদের জন্যে চাকরিটি সেই পদের সাথে মিল রেখেই কম্পিউটারে আপনি কতটা দক্ষ উল্লেখ করতে হবে। আজকের যুগে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্ট জানা বিশে কোন দক্ষতা নয় বরং ডেটা অ্যানালাইসিস, ম্যাক্রো কিংবা মাইক্রোসফটের বিষে কোনো প্রশিক্ষণ থাকলে তা উল্লেখ করুন। এর বাইরে যদি ম্যাটল্যাব বা এসপিএসএস জানা থাকে উল্লেখ করুন।
- Report Writing & Editing.
- Phone, Email & Face to Face Communication.
- MS Office Application Proficient.
- Data Entry Proficient.
- Any other Computer Experience.
শখ ও আগ্রহ
আপনার পছন্দের দুই একটি কাজের কথা এখানে লিখতে পারেন।
রেফারেন্স
রেফারেন্স খুব কাজের একটি মাধ্যম। সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষকেরা রেফারেন্স দিয়ে থাকেন। শিক্ষককে জানিয়ে তার নাম ও পদবি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন। অনেক সময় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে। শিক্ষক ছাড়াও অন্য কোন পেশাজীবির রেফারেন্স নেওয়া গেলে তার নাম ও পদবি যুক্ত করতে পারেন।
অঙ্গীকারনামা
এখানে আপনি নিশ্চিত করতে হবে সিভিতে প্রদত্ত সব তথ্য সঠিক ও নির্ভুল। এর নীচে আপনার স্পষ্ট স্বাক্ষর দিতে হবেব। মনে রাখতে হবে চাকরিদাতা আপনার তথ্য যাচাই করার আইনগত অধিকার রাখেন।
সিভি’র ফরমেট কেমন হওয়া উচিত?
সিভি এমন একটি ডকুমেন্ট যেটি দেখে চাকরিদাতারা আপনার সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধাারণা পাবে সে জন্যে একটি ভালো মানের সিভি কেন দরকার বুঝতেই পারছেন। সিভির ফর্যাট সম্পর্কে নীচে বিস্তরিত আলোচনা করা হলো।
সিভি’র দৈর্ঘ্য (Length):
কোন ফন্টে এবং কত ফন্ট সাইজে লিখবেন?
কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরী
১। বেশিরভাগ মানুষ অন্যের সিভি নকল করে সিভি তৈরি করেন। এতে চাকরিদাতারা বিরক্ত হন। সিভি অন্য কাউকে দিয়ে তৈরি করাও উচিত নয়। চাকরিদাতারা ভাবেন যে নিজের সিভিই তৈরি করতে পারে না তাকে চাকরি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত। ইন্টারনেট সার্চ কররেই অসংখ্যা সিভিল নমুনা পাওয়া যাবে। সেগুলো দেখে সাধারণ ধারণা নিয়ে সময় নিয়ে নিজেই নিজের সিভি তৈরি করুন। অন্যের সিভি নকল করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। আর এখানে ইংরেজীতে সিভি লেখার নিয়ম বলা হলেও বাংলায় সিভি লেখার নিয়ম একই। রাজনৈতিক সিভি ফরম্যাট সাধারণ সিভির মতনই হয়।
২। সিভি কখনো প্রথম পুরুষে লিখবেন না। যেমন ; আমি ২০২০ সালে ‘জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছি’ না লিখে লিখতে হবে ‘জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম’। সংবাদপত্রে প্রকাশিত শিরোনাম ও তারিখ স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে প্যারাগ্রাফের বদলে বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
৩। সিভি জমা দেওয়ার আগে অভিজ্ঞ কাউকে দেখিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিভাগের শিক্ষক কিংবা কোন সিনিয়রের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
৪। কোনভাবেই সিভিতে বানান ভুল করা যাবে না। সতর্কতার জন্যে মনোযোগ দিয়ে বারবার সিভি পড়তে হবে। সিভি দুই পৃষ্ঠার বেশি করা যাবে না। বাংলা সিভি এড়িয়ে যাওয়া ভাল।
৫। একই সিভি অনেক জায়গায় জমা দেওয়া যাবে না। চাকরির ভিন্নতানুসারে সিভি তৈরি করে রাখতে হবে।
৬। সিভিতে তৈরিতে এ-ফের আকারের কাগজের ব্যবহার করতে হবে। চারপাশে এক ইঞ্চি মাার্জিন রেখে সাদা কাগজে কারো কালিতে সবরকম তথ্য লিখতে হবে। সিভির ব্যাকগ্রাউন্ডে অন্য কোন রং ব্যবহার করা যাবে না।
৭। খালি সিভি জমা দেওয়া যাবে না। এর সাথে ‘কভার লেটার’ যুক্ত করতে হবে। কেন আপনি এই চাকরির জন্যে আবেদন করেরছেন, কেন আপনাকে তারা নেবে বিষয়টি কভার লেটারে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরতে হবে।
সিভি লেখার সহজ নিয়মঃ
অনলাইনে সিভি তৈরিঃ
- Resumonk
- Visual CV
- Resume.com
- Kick Resume
- Resume Help
মোবাইল দিয়ে সিভি তৈরি করার উপায়ঃ
- Aristoz Resume Builder Free
- CV Engineer
- Free Resume Builder
- Resumaker
পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সিভি সাবমিটঃ
One Comment